কক্সবাজার কোর্ট সেল যেন পরিনত হয়েছে চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন পশু দেখতে গেলে টাকার বিনিময়ে টিকিট নিয়ে যেতে হয়। কক্সবাজার কোর্টসেলও চিড়িয়াখানার চেয়ে কম নয়। কোর্ট সেলে বন্দীদের সাথে কথা বলা ও ভাত-নাস্তা দিলে স্বজনদের গুণতে হয় নগদ টাকা। এই কোর্টসেল দিন দিন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে আজ আদালতে আনা হয় ৪৩ জন বন্দীকে। এছাড়া আত্মসমর্পণ করা এবং বিভিন্ন উপজেলা থেকে নতুন আসামী আনা হয় ২৮-২৯ জন। সেই হিসেবে আজ কোর্ট সেলে মোট আসামী দাঁড়ালো ৭০-৮০ জন। কোর্ট সেলে আসামীদের সাথে দেখা করতে আসা কয়েকজন স্বজনের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা জানায় কারাগারে যেহেতু বন্দীদের সাথে দেখা বা কথা বলা যায় না। সেহেতু কোর্ট সেলে আত্মীয়-স্বজনরা একনজরে দেখতে আসে। এতে গুণতে হয় নগদ টাকা। কোর্টে টাকা ছাড়া চলে না। তেমনি কোর্টসেলও। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আসামীর স্বজনদের থেকে তারা। টাকার অর্ধেক ভাগ পায় কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক ও বাকী টাকা পায় কোর্টসেলের দায়িত্বরত পুলিশগণ।
আসামী রানার মা খালেদা আকতার জানান, ছেলেকে এক নজর দেখতে আসলাম। কিন্তু কোর্টসেলের পুলিশ আমার কাছ থেকে সাক্ষাতের বিনিময়ে ৫’শ টাকা দাবি করে। তবে শেষমেশ দিশেহারা হয়ে ৩’শ টাকা দিয়ে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে আসলাম। খুরশীদ নামে একজন পুলিশ আমার কাছ থেকে ওই টাকা নিয়েছেন সাক্ষাতের বিনিময়ে।
একইভাবে আসামী আব্দু সালামের অভিভাবক আমির হোসেন রুবেল অভিযোগ করে বলেন, তিনজন এক সাথে কোর্টসেলে ঢুকতে চাইলে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ দেড় হাজার টাকা দাবী করেন। কোনমতে ১ হাজার টাকা দিয়ে একটু কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। তবে সাক্ষাতের ২মিনিট হতে না-হতেই বের করে দেওয়া হলো আমাকে।
আসামী শাহাদাতের অভিভাবক হামিদ বলেন, এক প্যাকেট ভাত ও একটি পানির বোতল দিয়েছি ৫’শ টাকা দিতে হলো। পুলিশের একটি রুমে নিয়ে খুরশীদ নামের ওই পুলিশ টাকা নিলো।
বন্দীদের আরো বেশ কয়েকজন স্বজনের সাথে কথা বললে তারা অভিযোগ করে বলেন, টাকা ছাড়া কোর্টসেলে দেখা করার কোন সুযোগ নেই। এমনকি এটিএসআই খুরশেদ নামের পুলিশটার ব্যবহারও অনেক খারাপ। টাকা পেলে বন্ধুর মতো আচরণ করে, আর না দিলে কুকুরের মতো আচরণ করে মানুষ তাড়ায়। এসব ঘুষখোর পুলিশকে আইনের আওতায় আনা দরকার। আসামিদের সমস্যা হবে ভেবে, কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করে না বলে দাবী স্বজনদের। গত ২৯ মার্চ কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক সারওয়ার আলম যোগদানের পর থেকে কোর্টসেলে সবকিছুতে একটি নির্দিষ্ট রেট হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক সারওয়ার আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “কোর্ট সেলের কোন বিষয়ে আমার বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই। আপনি প্রয়োজন মনে করলে এএসপি স্যারের কাছ বক্তব্য নিতে পারেন।”
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম এর যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কোর্টসেলে বন্দীদের স্বজন থেকে
টাকা নেওয়ার কোন বিধান নেই। সরকারী বরাদ্দ থেকে আসামিদের জন্য টাকা খরচ করা হয়। টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার নজরে এখনো আসেনি। তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন, টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রমানিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুত্র: সকালের কক্সবাজার
পাঠকের মতামত